ই-বুক

তোমার নামে সন্ধ্যা নামে Pdf download by সাদাত হোসেন

বইয়ের নাম: ‘তোমার নামে সন্ধ্যা নামে’ ।

লেখক: সাদাত হোসেন

প্রকাশনী: Anyaprokash

স্টাটাস: Pdf / প্রি অর্ডার শুরু হচ্ছে শীঘ্রই

বই রিভিউ:

ফজলু মিয়া পিচিক করে পানের পিক ফেললো। তার মুখভর্তি বড় বড় গুটিবসন্তের দাগ। হাতে লোহার বালা। আঙুল জুড়ে নানারঙের পাথরের আঙটি। মোটা দানার মালা গলায়। পরনে সাদা লুঙ্গি, সাদা শার্ট। শার্টের বুকের কাছটায় ছিটকে আসা রক্তের দাগ। ফজলু মিয়া পান খাচ্ছে বলে অবশ্য বুকের কাছের রক্তের দাগটাকে পানের পিকের দাগ বলেও মনে হচ্ছে। তার ঠোঁটের কোষ গড়িয়ে রক্তের মতো লাল পানের রস ঝরছে। দৃশ্যটা দেখতে ভয়ঙ্কর। গভীর রাতে রক্তাক্ত দা হাতে দাঁড়ানো কোনো মানুষের ক্ষেত্রে সেই দৃশ্য আরো ভয়ানক হয়ে ওঠে।

ফজলু মিয়া আবারো পানের পিক ফেললো। বুড়িগঙ্গার পানির রঙ এমনিতেই কুচকুচে কালো। তাই ভোর রাতের অন্ধকারে তাকে আর আলাদা করে রঙ পাল্টাতে হয়না। ফজলু মিয়াকে অবশ্য হয়। তাকে দিনের আলোয় একরকম থাকতে হয়। রাতের অন্ধকারে অন্যরকম। তার হাতে সরু রাম দা। দা’র গা বেয়ে টপটপ রক্ত ঝরছে। তার পাশে সাতাশ আটাশ বছরের এক যুবক দাঁড়ানো। যুবকের নাম হেলাল। হেলাল বললো, ‘লাশ কী করবো, মিয়া ভাই?’

‘ছয় মণ ইট বানবি লাশের গায়। প্ল্যাস্টিকের দড়িতে বানবি। ইটের গায়ে ফুটা করা আছেতো?’

‘জে মিয়াভাই। আছে।’

‘প্রত্যেক ইটের ফুটার মধ্যে দড়ি ঢুকাইয়া বানবি। তাইলে ইট সহজে ছুটবো না। খবরদার, কাম করবি খেয়াল কইরা’।

‘জে মিয়াভাই।’।

‘তারপর মুন্সিগঞ্জের ওইদিকে গিয়া বড় নদীতে লাশ ডুবাই দিয়াসবি’।

হেলাল আর কথা বললো না। সব ব্যবস্থা আগেই করা আছে। ট্রলার ভর্তি কাঁচা মাছ। মাঝরাতে এই মাছ এসেছে চাঁদপুর থেকে। তারা এখন মাছের স্তুপের নিচে গলা কাটা লাশ লুকিয়ে রাখবে। তারপর চলে যাবে বড় নদীতে। সেখানে নিরিবিলি জায়গা দেখে ইট বাঁধা লাশ নদীতে ফেলে দিবে। সকাল হতেই ফজলু মিয়ার মাছের আড়ত জমে উঠবে। খুচরা পাইকারি মাছের ক্রেতায় সরগরম হয়ে উঠবে চারপাশ। না ঘুমানো টকটকে লাল চোখে ফজলু মিয়া আড়তের ক্যাশে বসে থাকবে। তার সামনে ক্যাশ বাক্সের ওপর ধুমায়িত চায়ের গ্লাস। গ্লাসের অর্ধেক জুড়ে দুধের সর। আগুন গরম চায়ের ভেতর আঙ্গুল ডুবিয়ে ফজলু মিয়া আঙ্গুলের ডগায় সর তুলে আনবে। তারপর সুরুৎ করে জিভ দিয়ে টেনে নিবে।

ফজলু মিয়ার গায়ের রঙ কুচকুচে কালো। নাকের নিচে মোটা গোঁফ। কুতকুতে চোখ। আজদাহা শরীর। কানের পাশ দিয়ে গাল পর্যন্ত নেমে এসেছে জুলফি। সে হাতের তালুর উল্টো পিঠে সেই জুলফি ঘসতে ঘসতে বলবে, ‘দুই মণ মাছ জামিলবাগের মাদ্রাসার এতিমখানায় দিয়ায়। গিয়া কইবি মিয়াভাই পাঠাইছে।’

ফজলু মিয়ার গা থেকে কাঁচা মাছের একটা উৎকট গন্ধ আসতে থাকে। তার আশেপাশে থাকা লোকজনের কাছে অবশ্য সেটা আঁতরের ঘ্রাণের মতো। সে সেই আঁতরের ঘ্রাণ বিলিয়ে বেড়ায়। তার চারপাশের মানুষ তাতে বুঁদ হয়ে থাকে।

আজ ফজলু মিয়ার কাছে চৌদ্দ- পনেরো বছরের এক ছেলে এসেছে। ছেলেটির নাম খলিফা। ফজলু মিয়া বললো, ‘খলিফা মানে জানস?’

ছেলেটা দাঁত বের করে হাসলো। তার মাঝখানে একটা দাঁত নেই। সে হাসতে হাসতেই বললো, ‘জামা সিলি করে।’

‘জামা সিলি কী?’

‘যারা জামা কাপুড় সিলি করে তাগো খলিফা কয়।’

ফজলু মিয়া চায়ের গ্লাস থেকে আঙুলের ডগায় সর তুলে জিভের আগায় দিতে দিতে বললো, ‘তাইলে তোর নাম খলিফা রাখছে কেন? তুই কি জামা কাপুড় সেলাই করস?’

‘আমি কি জানি? আব্বায় রাখছে।’

‘তোর আব্বা কী করে?’

‘তার কোনো খোঁজ খবর নাই। সে সোয়ারিঘাটে কুলির কাম করতো। মালসামানা আনা নেওয়া করতো। নৌকাও বাইতো।’

‘কয়দিন ধইরা খোঁজ খবর নাই?’

‘আইজ এক সপ্তাহ।’

‘অহ। বয়স কত তোর?’

‘জানিনা।’

‘ভাই বুইন?’

‘বুইন আছে।’

‘কী করে?’

‘গার্মিসে চাকরি করে।’

খলিফাকে কাজে নিয়ে নেয়া হলো। সে রোজ ভোরে এসে ট্রলার থেকে মাছ তোলার কাজ করবে। কঠিন কোনো কাজ না। ট্রলার থেকে দুই হাতে মাছ ছুঁড়ে ফেলবে পারের চাতালে। এই কাজে খলিফাকে যে দরকার আছে এমনও নয়। কিন্তু ফজলু মিয়ার মন বোঝা ভারি মুশকিল। তার আড়তে কাজ করার লোকের অভাব নেই। শক্ত-সামর্থ্য জোয়ান মরদদের ভিড় লেগেই থাকে। সকলেই জানে ফজলু মিয়া লোক খারাপ। সে কথায় কথায় রেগে যায়। অশ্রাব্য ভাষায় বাপ মা তুলে গালাগাল দেয়। মন-মেজাজ বেশি খারাপ থাকলে সটাসট চড় থাপ্পড়ও বসিয়ে দেয়। কিন্তু তাতেও কারো বিকার নেই। সবাই ফজলু মিয়ার সাথেই কাজ করতে চায়। তার গা থেকে ভেসে আসা পঁচা মাছের উৎকট গন্ধ আঁতরের ঘ্রাণ ভেবে গায়ে মাখতে চায়।

এ এক অদ্ভুত ব্যাপার। এই যে এতো এতো লোক থাকতেও ফজলু মিয়া খলিফাকে কাজে নিয়ে নিলো। তার বেতন ধরলো ছ হাজার টাকা। আদতে তার কোনো কাজই নেই। এও তার সেই অদ্ভুত হিসেবেরই অংশ। এই হিসেব বোঝে শুধু ফজলু মিয়া একা।

তার হিসেব সে ছাড়া আর কারো বোঝার সাধ্য নেই।

tomar name sondha name pdf book download by sadat hossen: coming soon here

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
Close
Close

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker