ব্রেইনকে শক্তিশালী করার উপায়

🧠 Control Your Brain
ঘুম থেকে উঠেই হাত চলে যায় চারকোণা ডিভাইসে, ডুবে যাই নীল-সাদার জগৎে। নোটিফিকেশন চেক, ইনবক্স চেক, নিউজ ফিড স্ক্রলিংয়ে অজ্ঞতাসারেই কেটে যায় কতগুলো ঘন্টা৷ ব্লাকহোলের মতো গ্রাস করে নেয় আমাদের সময়।
না আছে নামাজে মনোযোগ, না আছে নামাজ শেষে মসজিদে বসে একটু সময় কাটানোর ধৈর্য্য। ব্লাকহোলটি মন্থর করে দিছে আমাদের সৃজনশীল চিন্তাজগতের চাকা৷
লক্ষ্য করেছেন কীভাবে গ্রাস করা হয়েছে আমাদের সময়? কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে আমাদের মস্তিষ্ককে? আমাদের মনোযোগ হরণ করার জন্য ইদুর দৌড় প্রতিযোগিতায় নেমেছে খোদ মিডিয়াজগৎ। নাব্যতার সংকট দেখা দিছে আমাদের মনোযোগে। দীর্ঘক্ষণ মনোযোগ দেওয়ার সক্ষমতা তরুণ সমাজে নেই বললেই চলে।
যতদ্রুত সম্ভব এই দাসত্বের নিগড় থেকে বেড়িয়ে আসতে হবে। মস্তিষ্ককে নিয়ে আসতে হবে নিজের নিয়ন্ত্রনে। তবেই তরুণ সমাজ হাসান ইবনে হাইসান, আল বিরুনি, জাবির ইবনে হাইয়ানের অভাব ঘুচবে৷
আপনার মস্তিষ্ককে নিজের নিয়ন্ত্রনে আনতে জীবনকে পরিকল্পিতভাবে সাজাতে হবে। এজন্য আপনি কিছু স্টেপ ফলো করতে পারেন।
Step01: পার্থিব সংযোগ বিচ্ছিন্ন করুন
—————————————————–
পার্থিব নিয়মের জলস্রোতে যে গা ভাসিয়ে দিয়েছেন সেখান থেকে একটু মুক্তি নিন। সমুদ্রে অবস্থান করে সমুদ্রের পরিবেশ খুব ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করতে পারবেন না। একটু সময়ের জন্য হলে তীরে উঠে আসতে হবে। দেখতে হবে সমুদ্রের পরিবেশ। এজন্য পার্থিব শৃঙ্খলার তীরে উঠে আসুন, একটু অবসর নিন। নিজেকে কিছু প্রশ্ন করুনঃ-
আমি কে? পৃথিবীতে আমার অবস্থান কি?
কোথা থেক এসেছি? কেন এসেছি?
পৃথিবীতে আমার করণীয় কি? আমি কি করছি?
আবার কোথায় ফিরে যেতে হবে?
দুইটি প্রশ্ন খুব ভালোভাবে পর্যালোচনা করুনঃ- পৃথিবীতে আমার করণীয় কি? আর আমি কি করছি?
ব্যাবধান খুঁজে বের করুন দুটি উত্তরের মাঝে। যদি পার্থক্যের পরিমানটা বেশি হয় তাহলে জরুরীভাবে নিজেকে নিয়ে ভাবতে বসুন।
এজন্য আপনাকে সর্বপ্রথম নির্ধারণ করতে হবে একটি নির্জন স্থান। এমন একটি স্থান নির্বাচন করুন যে স্থান আপনাকে শুধু বাইরের জগৎ থেকেই বিচ্ছিন্ন রাখবেনা বরং আপনাকে আশেপাশের মানুষদের কাছ থেকেও আলাদা রাখবে। যে স্থানে বসে ভাবতে পারবেন আপনার স্বপ্ন, ইচ্ছা, আপনার জীবনপ্রবাহ ইত্যাদি। সময় নির্বাচনটাও খেয়াল রাখতে হবে । আপনার শান্তিময় প্রিয় অবসর মূহুর্তটাকে বেছে নিতে পারেন।
Step02: অনলাইনে নিজের উপস্থিতি নিয়ন্ত্রন করুনঃ-
————————————————————————
আমাদের সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো একটু সময় পেলেই বিচরণ করি অনলাইন জগৎে। নিউজফিড স্ক্রলিংয়ে কাটিয়ে দেই অবসরটুকু। যার ফলে কর্মঘন্টায় বা কোন বই পড়ার সময় ফেসবুক টুইটারের ইস্যুগুলো ঘুরপাক খায়। কাজে দীর্ঘ সময় মনোযোগ দেওয়া অথবা সৃষ্টিশীল চিন্তা করা আমদের পক্ষে কঠিন হয়ে পরে। এজন্য আপনাকে অনলাইন উপস্থিতিকে নিয়ন্ত্রন করতে হবে। আপনাকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে কখন আপনি ফোন চেক করবেন। অনেক সফটওয়্যার পাওয়া যায় যেগুলো আপনার স্মার্টফোন লক করে রাখতে পারে সেগুলো ব্যবহার করতে পারেন৷
Step03: মস্তিষ্ককে খালি করুনঃ-
——————————————–
মস্তিষ্কের অপ্রয়োজনীয় চিন্তাগুলো মুছে ফেলুন৷ মস্তিষ্কের গভীরে দৃষ্টি রাখুন, ভালো করে পর্যবেক্ষণ করুন দেখবেন অনেক অপ্রয়োজনীয় চিন্তাভাবনা আছে যা আপনার প্রয়োজন নেই। সেই অপ্রয়োজনীয় তথ্য, চিন্তাকে ঝেড়ে ফেলে দিয়ে মস্তিষ্ককে করুন আরো বেশি সচল। আরেকটা অভিনব কৌশল অবলম্বন করতে পারেন। একটা কলম নিন আরেকটা খাতা নিন তারপর লেখাশুরু করুন৷ মস্তিষ্কে যা কিছু আছে সব লিখুন। লেখা শেষে খাতার দিকে একটু তাকান, পর্যবেক্ষণ করুন আপনার জীবনপ্রবাহ।
Step04: মস্তিষ্ককে নতুন করে সাজিয়ে খেলুনঃ-
—————————————————————-
আপনি যদি মস্তিষ্ককে সফল ভাবে অনেকটা খালি করে ফেলতে পারেন তাহলে আপনার পরবর্তী কাজ হবে নতুন কিছু এন্ট্রি করা সবকিছু সাজিয়ে ফেলা। এজন্য রুটিনের বিপল্প নেই । আপনার জীবনস্রোতকে নির্ভরযোগ্য করতে হলে রুটিনের প্রয়োজনীতা ভাষায় প্রকাশ করা কঠিন। প্রথমে আপনাকে একটা লক্ষ্য নির্ধারণ করতে হবে যেমন ধরুন পরবর্তী ১০ বছর অথবা ২০ বছরে ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক এবং পড়াশোনার দিকে আপনার অবস্থান কোথায় থাকবে এমন একটি নকশা তৈরি করুন৷ আপনার লক্ষ্য পূরণের জন্য প্রতিদিন কতটুকু করে কাজ করতে হবে তা ভাগ করে নিন এবং সে অনুযায়ী রুটিন সাজিয়ে খেলুন। মূলকথা আপনার রুটিন হবে সালাত কেন্দ্রিক ব্যস। রুটিন তৈরি করা হয়ে গেলে কাজ শুরু করে দিন।
Step05: নিজেকে পর্যালোচনা করুনঃ-
—————————————————–
আপনি মস্তিষ্ককে সাজিয়ে ফেলেছেন নতুন একটি রুটিনের মাধ্যমে। কিন্তু প্রথমে যদিও খুব সম্ভব ভালোভাবে রুটিন মেনে চলতে পারলেও পরবর্তীতে রুটিন পূরণের পারদ নিচে নেমে আসে। বিরাট একটা সমস্যা ; তবে সমাধান খুব সহজ এবং ইন্টারেস্টিং৷ নিজেকে পর্যালোচনা করুন। একটা ডেইলি এক্টিভিটি নোট রাখুন সাথে। প্রতিদিন ঘুমানোর আগে পরেরদিন কি করবেন তা লিখে ফেলুন (রুটিন অনুযায়ী)। দিন শেষে পর্যালোচনা করুন আপনার প্লান অনুযায়ী কতটুকু পূরণ করতে পেরেছেন ভবিষ্যতে আরো উন্নত করতে কি পদক্ষেপ নিতে পারেন তা ভাবুন। নির্জনে বসে ভাবুন। হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) হেরা গুহায় ধ্যানমগ্ন থাকতেন। পারিপার্শ্বিক অবস্থা নিয়ে ভাবতেন। এভাবে দৈনিক নিজেকে পর্যালোচনা করুন। সবচেয়ে বড় কথা আল্লাহ তায়ালার কাছে দোয়া করুন। তবে আপনার জীবনের প্রতিটি কর্মে বরকত আসবে।
[বিঃদ্রঃ কিছু পয়েন্ট এবং আইডিয়া The Productive Muslim থেকে নেওয়া ]